প্যারেন্টিং কতপ্রকার? আপনার প্যারেন্টিং স্টাইল কোনটি?
বাবা অথবা মা হওয়ার একটি মজার দিক হল আমাদের প্রত্যেকের বাচ্চা লালন-পালনে কিছু পার্থক্য রয়েছে। একইসাথে, এক অভিভাবকের সাথে অন্য অভিভাবকদের রয়েছে অনেকখানি মিল। গবেষকরা চেষ্টা করেছেন চারটি সাধারণ প্যারেন্টিং শৈলীতে পিতামাতাকে গ্রুপ করার!
আপনার প্যারেন্টিং স্টাইলটি হচ্ছে আপনার সন্তান লালনপালনের জন্য ব্যবহার করা কৌশলগুলির সংমিশ্রণ। ১৯৬০ এর দশকে ''ডায়ান বাউমরিন্ড'' প্যারেন্টিং শৈলীর একটি সাধারণ-রেফারেন্সযুক্ত শ্রেণিবিন্যাস তৈরি করেন। ৪টি বাউমরিন্ড প্যারেন্টিং শৈলীর স্বতন্ত্র নাম এবং বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এগুলো হল-
১) কঠোরভাবে কর্তৃত্ববাদী
২) বন্ধুসুলভ প্যারেন্টিং
৩) অনিয়ন্ত্রতি স্বাধীনতা
৪) কম কর্তৃত্বপূর্ণ প্যারেন্টিং
প্রতিটি প্যারেন্টিং স্টাইল কমপক্ষে ৪টি বিষয়ের উপর নির্ভর করে: নিয়মকানুন বা শৃঙ্খলাশৈলী, যোগাযোগ, লালনপালন এবং প্রত্যাশা। চলুন এবার বাউমরিন্ড প্যারেন্টিং স্টাইলের ৪ ধরণের প্যারেন্টিং সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
১) কর্তৃত্ববাদী প্যারেন্টিং: কর্তৃত্ববাদী পিতামাতাকে অনুশাসক হিসাবে ভাবা হয়। তারা সামান্য আলোচনার মাধ্যমে একটি কঠোর শৃঙ্খলা স্টাইল ব্যবহার করে।
√ এধরণের প্যারেন্টিংয়ে বাচ্চাদের শাস্তি দেওয়া খুবই সাধারণ ব্যাপার।
√ যোগাযোগ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে একমুখী। পিতামাতার থেকে সন্তানের কাছে। সন্তানদের মতামত নেওয়া হয় না। বাচ্চাদের জন্য করা নিয়মগুলি এক্সট্লেইনও করা হয় না।
√ এই পিতামাতারা সাধারণত কম যত্নবান হন।
√ সন্তানদের সীমিত সুযোগ দিয়ে বেশি প্রত্যাশা করেন।
২) পার্মিসিভ প্যারেন্টিং: এধরণের প্যারেন্টসরা বেশিরভাগই তাদের সন্তানরা যা চান তা করতে দেন এবং সীমিত নির্দেশিকা বা দিকনির্দেশ সরবরাহ করে। তারা বাবা-মায়ের চেয়ে বরং বন্ধুসুলভ বেশি হয়।
√ তাদের নিয়মগুলো কঠোর প্যারেন্টসদের থেকে সম্পুর্ণ বিপরীত। তেমন কোনও নিয়ম নেই। তারা তাদের সন্তানদের সমস্যাগুলি নিজে নিজেই চিহ্নিত করার সুযোগ দেয়।
√ বাবামার সাথে আলোচনার সুযোগ থাকলেও এই প্যারেন্টসরা তাদের দিকনির্দেশনা দেওয়ার চেয়ে বাচ্চাদের নিজেনিজে সিদ্ধান্ত নিতে উৎসাহ দেয়।
√ এই প্যারেন্টসরা সন্তান লালনপালনে বেশ যত্নশীল।
√ প্যারেন্টদের প্রত্যাশা থাকে মিনিমাম কিংবা একেবারেই থাকে না।
৩) আনইভলভড প্যারেন্টিং: এই ক্যাটেগরির প্যারেন্টসরা বাচ্চাদের প্রচুর স্বাধীনতা দেয় এবং সাধারণত তাদের পারসোনাল লাইফ থেকে দূরে থাকে। অল্পকিছু পিতামাতাই এইভাবে ভাল ফল পান। অধিকাংশই প্যারেন্টিংয়ের প্রতি কম আগ্রহী হন বা বুঝেই উঠতে পারেন না কী করবেন।
√ কোন নিয়মকানুন থাকেনা। এই প্যারেন্টসরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কোনকিছু না শিখিয়ে সন্তানরা যা চান তাই করতে দেয়। কারণ প্যারেন্টিংয়ের ব্যাপারে তাদের ধারণা কম বা যত্নশীলতার অভাব।
√ বাবামার সাথে সন্তানদের কমিউনিকেমনের সুযোগ নেই বললেই চলে।
√ এই গ্রুপের প্যারেন্টসদের বাচ্চাদের কাছে প্রত্যাশা থাকেনা বললেই চলে।
৪) তুলনামূলক কম কর্তৃত্ববাদী প্যারেন্টিং: এই প্যারেন্টসরা সন্তানদের জন্য যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নেন এবং লালনপালনে যথেষ্ট যত্নশীল। বাচ্চাদের কাছে প্রত্যাশাগুলি স্পষ্ট করেন। এই শৈলীটি প্রদর্শনকারী প্যারেন্টসদের বাচ্চারা Self-disciplined এবং আত্মনির্ভরশীল হয়। তারা যেমন নিজেদের জন্য ভাবার সুযোগ পায়, অভিভাবকদের গাইডেন্সও পান। এই স্টাইলটি শিশুদের পক্ষে সবচেয়ে উপকারী বলে বিবেচনা করা হয়।
√ প্যারেন্টসরা নিয়মকানুন নিরর্ধারণ করেন এবং এর পেছনের কারণগুলি ব্যাখ্যা করেন।
√ বাবামা ও শিশুদের উভমুখী যোগাযোগের সুযোগ থাকে। আর সেটা বাচ্চাদের বোঝার উপযোগী হয়।
√ পিতামাতারা সন্তান লালন-পালনে যত্নশীল।
√ গোল এবং প্রত্যাশা হাই তবে স্পষ্ট। যাতে শিশুরা লক্ষ্য অর্জনে ইফোর্ট দেয় এবং চেষ্টা করে।
প্যারেন্টিং মোটামোটি এই ৪ ধরণের হলেও, ব্যক্তিভেদে সবসময় একটা পার্টিকুলার স্টাইলেই হয় এমন না। বিভিন্ন স্টাইলের সংমিশ্রণও দেখা যায় প্যারেন্টিংয়ে। আবার একই শিশুর বাবা ও মায়ের প্যারেন্টিং স্টাইলও আলাদা হতে পারে। এটা ডিপেন্ড করে আসলে।
বাউমরিন্ড প্যারেন্টিং শৈলীগুলি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কেন্দ্রিক এবং এগুলো সাংস্কৃতি ভেদে প্যারেন্টিংকে কতটুকু বর্ণনা করে তা স্পষ্ট নয়। তবে এটুকু বলতে পারি, এখান থেকে শেখার আছে। বাবামা'ই বাচ্চাদের লাইফের প্রথম এবং সবচেয়ে বেশি ইমপ্যাক্ট তৈরি করা 'সুপারহিরো'। পজেটিভ প্যারেন্টিং বাচ্চাদের সুস্থ ও সুন্দরভাবে গড়ে ওঠার পেছনে অনেক বড় ভূমিকা রাখে। তাই পুরনো ধ্যান ধারণা থেকে বের হয়ে এসে আমাদের প্যারেন্টিং কিছুটা ইভলভ করা উচিত।
Comments
Post a Comment